বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইনের জমি অধিগ্রহণ শুরু : ঢাকার সাথে দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
ছবিঃ প্রতিনিধি |
শুভজিৎ সরকার, চিফ টিভিঃ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেললাইন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘুচতে যাচ্ছে উত্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব যেমন কমবে, তেমনি সম্প্রসারিত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য। গতি আসবে জীবনযাত্রায়। প্রকল্প অনুমোদনের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর এ রেলপথ নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বগুড়া জেলা প্রশাসন।
বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ এখন আর উত্তরাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন নয়; বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরু হবে যা শেষ হবে ২০২৬ সাল লাগাত। এটি বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে বগুড়ার রেলপথের দূরত্ব কমবে ১১২ কিলোমিটার; সময় বাঁচবে তিন থেকে চার ঘণ্টা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব-সংবলিত চার ধারার নোটিশ ভূমি মালিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। পাশের জেলা সিরাজগঞ্জেও জমির মালিকদের নামে নোটিশ প্রস্তুতের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের শুরুতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরুর খবরে শুধু বগুড়া নয়, আশপাশের জেলার মানুষের মাঝেও উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কারন এর মধ্য দিয়ে ঘুচতে যাচ্ছে উত্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ,পূর্ণ হচ্ছে স্বপ্ন।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রেলওয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বগুড়ার সঙ্গে সিরাজগঞ্জের সরাসরি রেলপথ নেই। অথচ দুই জেলার মধ্যে দূরত্ব মাত্র ৭২ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ চালু হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব। বর্তমানে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি রেলপথ না থাকায় এ অঞ্চলের ট্রেনগুলোকে সান্তাহার, নাটোর ও পাবনার ঈশ্বরদী হয়ে প্রায় ১২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। বাড়তি পথ ঘুরতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে তেমনি বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। বগুড়া থেকে যেখানে সড়কপথে ঢাকায় পৌঁছাতে লাগে ছয় ঘণ্টা, সেখানে ট্রেনে যেতে লাগে ৯-১০ ঘণ্টা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রেলপথে অন্তত তিন-চার ঘণ্টা সময় বাঁচবে। একইসঙ্গে বছরে আন্তঃনগরের দুটি ট্রেনে জ্বালানি সাশ্রয় হবে চার কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ) নতুন রেলপথ নির্মাণে ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বগুড়ার সীমানা পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হবে ৪৭৯.১৫ একর। বাকি ৪২০.৬৮ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে সিরাজগঞ্জ জেলায়। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১,৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো- বগুড়ার ছোট বেলাইল এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭৩ কিলোমিটার এবং অপরটি বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। মূলত সান্তাহারের দিক থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে সান্তাহার হয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুরগামী ট্রেনগুলো যাতে বগুড়া স্টেশনকে এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করতে পারে, সেজন্য কাহালু-রাণীরহাট রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। দুটি রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রাণীরহাটে একটি জংশনও নির্মাণ করা হবে। আরেকটি জংশন হবে সিরাজগঞ্জে।
এছাড়া নতুন রেলপথের জন্য দুই জেলা সীমানায় আরও ৬টি স্টেশন করা হবে। সেগুলো হলো: শেরপুর, আড়িয়া বাজার, ছোনকা, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ ও কৃষ্ণদিয়া।
কোন মন্তব্য নেই