বগুড়ায় চাকরি দেয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ করলেন অধ্যক্ষ ও সভাপতি - Chief TV - চিফ টিভি
শুভজিৎ সরকার স্টাফ রিপোর্টারঃ
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার নিমাইদিঘী আদর্শ কলেজে বিভিন্ন পদে চাকরির প্রলোভেন দেখিয়ে বেকার যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ ওসমান গনি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে।
একজন অধ্যক্ষ এবং সভাপতির এমন প্রতারণার ঘটনা জানাজানি হলে পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।
এরই প্রেক্ষিতে, আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গনে ভুক্তভোগী পরিবার এবং এলাকাবাসী অধ্যক্ষ ও সভাপতির এমন প্রতারণার বিরুদ্ধে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।
জানা যায়, নিশিন্দাড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসানের ছেলে মাসুদ রানা নিমাই দিঘী আদর্শ ডিগ্রী কলেজে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে চাকরির জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এবং অধ্যক্ষ ওসমান গনি ৮ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন যুবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় কলেজের উন্নয়ন এবং চাকরি দেওয়া নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মাসুদ রানা বলেন, "নিমাই দিঘী আদর্শ কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ভুক্তভোগী আমাকে বিভিন্ন সময় চাকরির জন্য যোগাযোগ করতে বলেন। এক সময় দেখা করলে তাকে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে চাকরি দেবেন বলে জানান সভাপতি। এরপর তাকে নিয়ে প্রিন্সিপালের সঙ্গে বসে চাকরির বিষয়ে মৌখিক চুক্তি করেন। তখন কলেজের উন্নয়নের জন্য ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, আগাম টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানান সভাপতি ও অধ্যক্ষ। পরে চাকরি ও কলেজের উন্নয়নের আশায় গত, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা প্রিন্সিপাল ও সভাপতিকে দিয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগী।
তবে টাকা পাওয়ার পর থেকে পাল্টিয়ে যায় তাদের চিত্র। বিভিন্ন সময় চাকরির কথা জিজ্ঞেস করলে নানা বাহানা দেখায় এবং এক সময় তিনি আবারো টাকার দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে পরে জানতে পারি আমাকে বাদ দিয়ে অন্য আরেকজনকে টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ প্রদান করেছেন।
পরে আমি আমার দেয়া ৮লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের কাছে ফেরত চাইলে তারা আমাকে টাকা ফেরত দিবে না মর্মে অস্বীকার করে।"
এ বিষয়ে ওই কলেজের সহকারি অধ্যক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি তারা আগে জানতেন না। মাসুদ রানা নামের এক যুবকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনা এলাকায় প্রকাশ হওয়ার পরে বিষয়টি তারা জানতে পারেন। এ বিষয়টি নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এবং অধ্যক্ষ ওসমান গনিকে নিয়ে একটি মিটিং হয়। সেখানে অধ্যক্ষ আসমান গনি, টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান কলেজে শুধুমাত্র একটি শূন্য পদ ব্যতীত আর কোন শূন্য পথ নেই। তা এই শুন্য পদে শিক্ষা অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ই পারেন পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিতে। এখানে টাকা নিয়ে কেউ শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেন না।
এছাড়াও তিনি আরো জানান, মাসুদ রানা ব্যতীত আরো পাঁচজনের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এবং প্রধান অধ্যক্ষ ওসমান গনি ৮৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে তারা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যক্ষ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে সত্যতা জানতে ওই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন এবং অধ্যক্ষ ওসমান গনির সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদেরকে মুঠোফোনে পাওয়া যায় না।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি প্রতারকদের আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত শাস্তি এবং এমন প্রতারণার শিকার যেন আর কেউ না হয় এমন দাবি করেন তারা।
কোন মন্তব্য নেই