নীলফামারীতে বেড়েই চলেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত চায়না দুয়ারী জাল,অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় মাছের - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
| ছবি-প্রতিনিধি |
নীরফামারীর জলঢাকায় বিভিন্ন নদী সহ খাল বিলে মৎস অধিদপ্তর কতৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত চায়না দুয়ারী জাল নামের বিশেষ ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করে নির্বিচারে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় লোকজন সহ জেলেরা। খুব সহজে এই জাল দিয়ে বেশি মাছ ধরার জন্য এই ফাঁদ ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে দেশী প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা ও জানা গেছে, মাছের প্রজনন মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ভয়ংকর চায়না দুয়ারী জাল নামক ফাঁদে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ধরা পড়ছে। সহজেই সব ধরনের মাছ ধরার আশায় উপজেলার সকল নদ নদী সহ খালবিলে জেলেরা অহরহ ব্যবহার করেছেন এ জাল। এ ধরনের ক্ষতিকর ফাঁদ ব্যবহার বন্ধে মৎস্য বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযান চালিয়ে জব্দ করেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না । ফলে সকল নদী খাল বিলের সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ সূক্ষ্ম এ জালের ফাঁদে ধরা পড়ছে। বিশেষ করে তিস্তা, বুড়ি তিস্তা,চারাল কাঠা,যমুনেশ্বরী,বুল্লাই,আউলিয়াখানা নদীর পানি বৃদ্ধি, হ্রাসও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা পুঁটি, ট্যাংরা, কই, শিং, শোল, টাকিসহ দেশি প্রজাতির সব মাছ চায়না দুয়ারী নামক জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছশূন্য হয়ে পড়ছে নদ-নদী ও খাল-বিল। চায়না দুয়ারী জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা এবং ৫০ থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট ঢলুক আকৃতির হয়ে থাকে। লোহার চারটি রড ও রডের রিং দিয়ে খোঁপ খোঁপ আকারে বক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয়। এই ফাঁদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, নদীর তলদেশে লম্বালম্বিভাবে লেগে থাকে। ফলে কোনো ধরনের খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুদিক থেকেই মাছ ঢুকে আটকা পড়ে। তবে কেউ কেউ অতিরিক্ত মাছের আশায় ঘ্রাণ জাতীয় মাছের খাবার দিয়ে থাকে। একটি চায়না দুয়ারীর দাম (মানভেদে) ৪-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ জাল শুরুতে কেরানীগঞ্জ,ফরিদপুর, মাগুরা, পাবনায় এ ফাঁদ তৈরি হলেও অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বর্তমানে নদী বেষ্টিত রাজশাহী ও নাটোর এলাকাতেও এ জাল তৈরি হচ্ছে বলে জানা যায় ।
নদী পাড়ের স্থানীয় জেলেরা জানান, চায়না দুয়ারীতে সব ধরনের মাছ ছেঁকে ওঠে, সহজেই মাছ ধরা যায় এবং দাম কম হওয়ায় বেশির ভাগ জেলে বর্তমানে এ দুয়ারী জাল ব্যবহার করছেন। এছাড়া অনেক শৌখিন মৌসুমি মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরতে নেমেছেন। ফলে যাঁরা পুরোনো কৌশলে মাছ ধরতেন, তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে চায়না দুয়ারী কিনছেন।
বড় তিস্তা নদীর পাড়ের বাসিন্দা হোসেন জানান, বিকেল হলেই ছোট ছোট নৌকা করে এই চায়না দুয়ারী নদীতে ফেলা হয়। সারা রাত নদীতে রাখার পর সকালে তুলে আনা হয় পাড়ে। এ সময় জালে ধরা পড়ে দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় সব মাছ, নদীতে থাকা জলজ প্রাণী এমনকি ছেঁকে ওঠে মাছের ডিমও। এ জাল দিয়ে মাছ ধরলে কিছুদিন পর হয়তো নদীতে আর কোনো মাছ পাওয়াই কঠিন হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারি জেলেরা বলেন, ‘চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘চায়না দুয়ারী বন্ধে মৎস্য আইনে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তাই বাজারে বিক্রি বন্ধে কারেন্ট জালের মতো কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তবে নদীতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাছ ধ্বংসের ধারা প্রয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। আমরা সেভাবেই অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এছাড়া প্রাথমিকভাবে সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও অভিযান চলমান রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই