মোহাম্মদ রুস্তম আলী কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান উন্নতকরণ ও ঝরে পড়া রোধ করতে বরাবরের মতো প্রতিবছরই প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সরকার ব্যয় করছে কোটি কোটি টাকা। প্রণয়ন করছে বিভিন্ন নীতিমালা। ভাতা ও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধূলার আধুনিক সরঞ্জামসহ খরচের খাতায় কমতি নেই প্রাথমিক শিক্ষা খাতে।
শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে হাওরাঞ্চলসহ শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে সুসজ্জিত প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষকদের প্রশিক্ষনের জন্য রয়েছে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, নির্ধারণ করা আছে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া। তবুও গ্রামে গঞ্জে এমনকি উপজেলা, ইউনিয়ন ও স্থানীয় উন্নত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
গ্রামাঞ্চলের কিন্ডারগার্টেনগুলোতে স্নাতকসহ শিক্ষায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ব্যক্তিদের দ্বারাই বেশির ভাগ কিন্ডারগার্টেনে চলে পাঠদান। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাশ শিক্ষকের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
সুযোগ সুবিধা ও প্রশিক্ষণের দিক দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ধারে কাছেও নেই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো।
শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন ও মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অজপাড়া গাঁয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ে কিন্ডারগার্টেনগুলো অনেকটাই এগিয়ে।
এমনকি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া ও নিকটবর্তী স্থানেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে নতুন নতুন কিন্ডারগার্টেন স্কুল। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। দিন দিন কমে যাচ্ছে তাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিশুরা পাচ্ছেনা প্রশিক্ষিত শিক্ষকের দ্বারা শিক্ষা।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে বেশী পড়ানোর ছলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা, অভিভাবকদের উপর পরছে অতিরিক্ত খরচার ভার।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ঘেসে কিন্ডারগার্টেন স্থাপন যেনো প্রতিযোগিতার আসর হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রামেগঞ্জে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে স্বল্প খরচায় উন্নতমানের শিক্ষা পাওয়া নাগরিকের অধিকার সেখানে অতিরিক্ত খরচা করে কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের ভর্তি করতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা।
তদারকির অভাব ও সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকায় সরকারি বিদ্যালয়ের কাছে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নিয়ম নীতির বালাই নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। ভর্তি ফি, বেতন, সেশন ফি ও এ্যাসাইনমেন্টনসহ নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ইউএনও ফারাশিদ বিন এনাম উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বোর্ডবাজারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনেই নতুন একটি কিন্ডারগার্টেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি উদ্বোধন করে ফুলেল শুভেচ্ছাও গ্রহণ করেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। অথচ কিন্ডারগার্টেনটির সামনেই রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে রয়েছে দশজন শিক্ষক ও সাড়েতিনশোর মতো শিক্ষার্থী। উন্নতমানের ভবনসহ সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধাই পাচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর স্থানীয় প্রভাব ও চটকদার বিজ্ঞাপনের কাছে হার মেনে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু হওয়ায় দেশের অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে বন্ধের উপক্রমে সেখানে সরকারি বিদ্যালয়ের একেবারে সামনেই নতুন একটি কিন্ডারগার্টেন ইউএনওর মতো একজন সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা উদ্বোধন করায় জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী, বাজিতপুর ও নিকলী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া ও নিকটবর্তী স্থানে অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল চলতে দেখেন এ প্রতিবেদক। যেগুলোতে নেই উচ্চশিক্ষিত শিক্ষক ও সুযোগসুবিধা। অথচ স্থানীয় প্রভাব ও কৌশলে স্কুলের নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা।
কোন মন্তব্য নেই