সৈয়দপুরে ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির ফলে জনভোগান্তি - Chief TV News
মোা:জাকির হোসেন সৈয়দপুর (নীলফামারী)
জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নাশকতা মামলার আসামী হওয়ায় পালিয়ে থাকার কারণে দিনের পর দিন অনুপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান। গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসে দায়িত্ব পালন না করেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখিয়ে চেয়ারম্যানী পদ টিকিয়ে রেখেছেন।
এতে চেয়ারম্যান তার সুযোগ সুবিধা যথারীতি পেলেও জরুরী প্রয়োজনে পরিষদ কার্যালয়ে এসে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নবাসী। এমতাবস্থায় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী উঠেছে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২ টায় ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের অফিস খোলা কিন্তু চেয়ারম্যান নাই। পরিষদ চত্বরে ২০-২৫ জন মানুষ বিভিন্ন কাজে এসে চেয়ারম্যানের অপেক্ষায়। জানতে চাইলে ইউপি সচিব রশিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান সকালে এসেছিল। কিছুক্ষণ আগে বাইরে গেছেন। অথচ উপস্থিত সেবা নিতে আসাদের বক্তব্য সকাল থেকে অপেক্ষা করেও চেয়ারম্যানের দেখা মেলেনি।
সূত্রের অভিযোগ অফিস খুলে রেখে জনগণকে ধোকা দেয়া হচ্ছে। আসলে চেয়ারম্যান নিয়মিত আসেনা। মাঝে মাঝে আসলেও মাত্র ১০-১৫ মিনিট থেকেই চলে যান। একদিন এসেই হাজিরা খাতায় সপ্তাহের উপস্থিতির স্বাক্ষর করেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে চেয়ারম্যান এভাবে তার দায়িত্ব অবহেলা করে চললেও প্রশাসন নির্বিকার। এমনকি নাশকতা মামলায় আটকের পরও তার বিরুদ্ধে বিধিগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অথচ একই কারণে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে প্যানেল চেয়ারম্যান কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আব্দুর রহিম নামে ইউনিয়নের নিজবাড়ী থেকে আসা এক ব্যক্তি বলেন, কিছুদিন হলো মা মারা গেছেন। মায়ের নামের টিসিবির কার্ড স্ত্রী বা আমার নিজের নামে করে নেয়ার জন্য আজ ১০ দিন থেকে পরিষদে আসতেছি। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও চেয়ারম্যানের দেখা না পাওয়ায় তার স্বাক্ষরের অভাবে কাজ হচ্ছেনা। মোবাইলও ধরছেন না যে, কোথায় আছেন জেনে সেখানে গিয়ে তার স্বাক্ষর নিবো। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
আল মকসুদ নামে ধলাগাছ এলাকার আরেকজন বলেন, আমার ভোটার আইডি কার্ড হয়েছে। কিন্তু জন্মনিবন্ধন সনদটা পাচ্ছিনা। তাই জন্মসনদের একটা কপির জন্য গত কয়েক দিন ধরে পরিষদে আসছি। জন্মসনদের প্রিন্ট কপি পাইলেও তা চেয়ারম্যানের সত্যায়নের জন্য আটকে আছে। প্রতিদিন সকাল সন্ধা আসলেও চেয়ারম্যানের ধরা পাচ্ছিনা। যখনই আসি তখনই দেখি অফিস খোলা কিন্তু চেয়ারম্যান নাই।
জিঙ্গেসা করলে গ্রাম পুলিশ, সচিব সবাই বলেন এতক্ষণ চেয়ারম্যান ছিল। এই মাত্র তিনি বাইরে গেলেন। অথচ অনেকের কাছে জানতে পেরেছি তিনি আসেননি। এভাবে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ইউনিয়নবাসী প্রয়োজনীয় কাজে এসে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে পেরেশান হচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
এদিকে চেয়ারম্যান না থাকায় পরিষদের সকল কাজেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি জরুরী জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ করতেও সমস্যায় পড়ছেন মেম্বাররাসহ সচিব ও অন্যান্য কর্মচারীরা। এমনকি সংবাদকর্মীরাও কোন তথ্য নিতে গেলে হয়রান হচ্ছেন। চলমান কয়েকটি প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সচিব, সহকারী সচিব, মহিলা মেম্বার ও ওয়ার্ড মেম্বার কোন তথ্য দিতে পারেননি। কাজগুলো চেয়ারম্যান নিজে করছেন বলে সে বিষয়ে তাদের কোন কিছুই জানা নেই। চেয়ারম্যান কে সচিব মোবাইল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ওয়ার্ড মেম্বার বলেন, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে আমরা ওয়ার্ডবাসীকে চাহিদামত সেবা দিতে পারছিনা। এমনিতে উন্নয়ন কাজ নেই। তার ওপর যদি জনগণের ছোট ছোট প্রয়োজনীয় কাজগুলোও সময়মত করে দিতে না পারি তাহলে এলাকাবাসীকে কি জবাব দিবো? এমন চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনে কোন মুখে ভোট চাইবো? চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা হয়ে মামলার আসামী হওয়ায় পালিয়ে বেড়ানোয় এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা। ইউনিয়নবাসীর এই সেবা বঞ্চনার ভোগান্তি দূর করতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন সরকারের মুঠোফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, জনভোগান্তি কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ইউপি চেয়ারম্যানের কারণে যদি মানুষ সেবা বঞ্চিত হন তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে। এনিয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। তবে এখন যেহেতু জানতে পারলাম বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই