শিরোনাম

শিক্ষকদের ওপর জলকামান তারপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা পুলিশের - Chief TV News

 


কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার এবং লাঠিপেটা করে রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন সচিবালয়মুখী সড়ক থেকে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। রোববার বিকেল চারটার পর পুলিশের এই পদক্ষেপে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে পিছু হটে।

এরআগে সকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে বাতিল হওয়া নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে সকাল থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী এরপর দুপুরে মহাসমাবেশ করেন তারা।

সমাবেশ শেষে ৩টার পরপর সেখান থেকে পদযাত্রা করে হাজারের বেশি মানুষ হাইকোর্ট মাজারের দিকে অগ্রসরহন। ঠিক ৪টার দিকে সচিবালয়মুখী রাস্তায় তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তখন আন্দোলনকারীরা ওই রাস্তায় অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের। এরপর আন্দোলনকারীরা যে যাঁর মতো দৌড়ে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।

নওরীন জামান নামের একজন আন্দোলনকারী বলেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল।পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে। লাঠিপেটা ও পরে জলকামান ব্যবহার করেছে। এমন একটা যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ কেন জবরদস্তি করছে, এটা বুঝতে পারছেন না।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।

আন্দোলনকারী সানজিদা আক্তার রুমা বলেন, প্রতিযোগিতা করে, সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ১১ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করতে হচ্ছে, পুলিশের মার খেতে হচ্ছে। এত অন্যায় হচ্ছে, এটা বলে বোঝাতে পারবেন না।

আফরিন নামের আরেক আন্দোলনকারী বলেন, চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর এখন মনে হচ্ছে অপরাধী হয়ে গেছি। মা–বোন–সন্তানসহ রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। দুপুরের পর তাঁরা পদযাত্রা করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট মাজারের সামনে এসে তাঁরা প্রেসক্লাবের দিকে না গিয়ে সচিবালয়ের দিকে রওনা দেন। তখন তাঁদের ব্যারিকেড দিয়ে বাঁধা দেওয়া হয়। তাঁরা ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এর আগে সকালে সহস্রাধিক আন্দোলনকারী জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে মহাসমাবেশ করেন। মহাসমাবেশ ও পদযাত্রায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের চাকরি ফেরতপ্রত্যাশীরা অংশ নেন।

আন্দোলনকারীরা জানান, টানা ১১ দিনের মতো তাঁরা এই অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের যৌক্তিক আন্দোলনে তিন দিন পুলিশ বলপ্রয়োগ করেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবারও তাঁদের ওপর জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করার পাশাপাশি পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ তাঁদের ওপর জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করেছিল। ওই দিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটাও করে।

আন্দোলনকারীদের একজন নাজমুন নাহার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে সুপারিশপ্রাপ্তদের ওপর চরম অন্যায় করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের সুপারিশপ্রাপ্তরা এখন চাকরি করছেন, অথচ একই প্রক্রিয়ায় সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এক নিয়োগে দুই নীতি মেনে নেওয়া হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়া হবে না।

আন্দোলনকারীরা আরও জানান, তাঁরা দিনে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন, আর রাতে তাঁরা থাকেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। এভাবে তাঁরা ১১ দিন ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করছেন।

প্রসঙ্গত, তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় ধাপ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন।

নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন।

এর আগে গত বুধবার রাজধানীর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে আন্দোলন করেন সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগবঞ্চিত ব্যক্তিরা। পরে গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনের অংশ হিসেবে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে শাহবাগ থেকে তাঁদের সরিয়ে দেয়।


কোন মন্তব্য নেই