শিরোনাম

শাজাহানপুরে চুরির আতঙ্কে গ্রামবাসী, রাত জেগে দিচ্ছেন গ্রাম পাহারা - Chief TV - চিফ টিভি

শাজাহানপুরে চুরির আতঙ্কে গ্রামবাসী, রাত জেগে দিচ্ছেন গ্রাম পাহারা - Chief TV - চিফ টিভি
ছবিঃ প্রতিনিধি

নাজিরুল ইসলাম, শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ধর্ষ এক চুরির ঘটনায় পুরো গ্রামবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে করে সচেতন গ্রামবাসীর উদ্যোগে প্রতিটি রাত জেগে রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন ওই গ্রামের বেশকিছু সচেতন ব্যক্তিরা। গ্রামের ছোট বড় সব বয়সী ব‍্যক্তিদের নিয়ে রাত পাহারায় একটি পঞ্চায়েত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাতে করে নিজেদের কষ্টে অর্জিত ধন-সম্পদ রক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে দিনাতিপাত করতে পারেন। তাদের উদ্দেশ্য কেবল গ্রাম থেকে চুরি রোধই নয় পাশাপাশি ওই গ্রামের কেউ যেন মাদকের ভয়াল নেশায় আসক্ত না হয় সেদিকে থাকবে কঠোর নজরদারী। এমন ব‍্যক্তিক্রমধর্মী উদ‍্যোগ নিয়েছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের মানিকদিপা পদ্মপাড়া এলাকার সচেতন গ্রামবাসী।

সরোজমিনে গত (২২ ফেব্রুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটায় গ্রাম পাহাররত অবস্থায় টর্চ লাইট, মূখে বাঁশী ও হাতে লাঠি নিয়ে একদল যুবকদের পুরো গ্রাম ঘুরতে দেখা গেছে। তারা জানিয়েছেন আমরা কমিটির নিয়ম অনুযায়ী তালিকা মোতাবেক প্রতিদিন ৩০ জন করে প্রত‍্যেক রাত ফজর পযর্ন্ত এভাবেই আমাদের গ্রাম পাহারা দিয়ে থাকি। এর ফলে গ্রামের কিছু বখাটে যুবক ছেলেরা সর্তকতা অবলম্বন করে চলছে।

জানাগেছে, এর আগে চলতি মাসের  (১২ ফেব্রুয়ারি) সোমবার দিবাগত রাতে ওই গ্রামের আব্দুল হাকিমের বাড়িতে দুর্ধর্ষ এক চুরির ঘটনা ঘটে। অভিনব কৌশলে চোরেরা হাকিমের বাড়ির মাটির ঘরে সিঁদ কেটে চুরি করে ৫টি গরু। পরে ভোর বেলায় খুঁজতে গিয়ে দুইটি গরু উদ্ধার হয়। এতে ওই পরিবারের প্রায় ৩ লাখ টাকার অধিক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলেও জানা যায়। এ ঘটনার পর থেকেই ওই গ্রামে চুরির আতঙ্ক গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

অত্র গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, বিগত পঞ্চাশ বছর যাবত আমাদের গ্রামে চুরি, ছিনতাই, মাদক সহ কোন ধরনের অপরাধমুলূক কর্মকান্ড ঘটেনি। হঠাৎ করে বতর্মানে কিছু বিচ্ছিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা মাঝে মাঝে এই গ্রামে ঘটছে। তারই প্রেক্ষিতে এসব অপকর্ম রোধে আমরা গ্রাম‍্য বৈঠকের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেলক্ষ‍্যে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি গ্রাম পাহারা দিতে গ্রাম পঞ্চায়েত  কমিটি গঠন করেছি। এই গ্রামে তিনশত পরিবার বসবাস করেন। প্রত‍্যেক পরিবার থেকে একজন করে কমিটিতে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। প্রতিদিন ৩০ জন ব‍্যক্তি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পুরো গ্রাম সারারাত পাহারা দিবে।

ওই গ্রামের পঞ্চাশ বছর বয়সী ফজলুল হক জানান, আমি ছোট বেলায় একদিন আমাদের গ্রাম থেকে দুটি গরু চুরির ঘটনা দেখেছি। তারপর থেকে আজ পযর্ন্ত কোন চুরির ঘটনা ঘটেনি। এমনকি মাঠে কাজ শেষে সেলো মেশিন, পাওয়ার টিলার ফেলে রেখে আসতাম। কোন কিছুই চুরি হত না। আগে আমাদের গ্রামে অল্প বয়সের যুবকেরা মাদক তো দূরের কথা কাঁচের গুটি (মারবেল), তাস সহ অনেক আজেবাজে খেলাধুলা করার সাহস পযর্ন্ত পেত না।

অত্র গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মরহুম আমির হামজার ছেলে মুনিরুজ্জামান মজনু জানান, আমরা গ্রামবাসী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের গ্রামে এখন থেকে আর কোন প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপ করতে দেয়া হবে না। গ্রামের সচেতন ব‍্যক্তিদের নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই গ্রাম থেকে সকল অপকর্ম প্রতিহত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। গ্রামবাসির এই উদ‍্যোগে সমাজের গণ‍্যমান‍্য ব‍্যক্তিবর্গ আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। গ্রামের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রাখতে অত্র গ্রামবাসী শাজাহানপুর উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এবিষয়ে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, ওই গ্রামের চুরি ঘটনা জেনেছি। তারপর থেকে ঘটনাটি পুলিশি নজরদারীতে রয়েছে। গ্রামবাসী যে উদ‍্যোগটি গ্রহণ করেছেন তা শতভাগ সফল করতে সর্বোচ্চ পুলিশি সেবা প্রদান করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই