চাঁপাইনবাবগঞ্জে চিয়াসিড চাষে নতুন সম্ভাবনা - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
ছবিঃ প্রতিনিধি |
মনিরুল ইসলাম, জেলা (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের রাজধানী খ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে চিয়াসিড। ‘সুপার ফুড’ নামে খ্যাত নতুন এ ফসল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও নাচোল উপজেলা চাষ করছেন চাষিরা ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলা কসবা ইউনিয়নে অঝইর গ্রামের চাষি মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রথম বারের মতো পরীক্ষা মূলক ভাবে মরুভূমি অঞ্চলে এ ফসল চাষ করছেন ।
ঔষধি গুণাগুণ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ চিয়াসিড এর বৈজ্ঞানিক নাম সালভিয়া হিসপানিকা। সাধারণত অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা, মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ঔষুধী ফসল হিসেবে চাষ হয়। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাচোল উপজেলা অঝইর গ্রামের কৃষক মোঃ শফিকুল তার দুই বিঘা পতিত আম বাগানে স্থানীয় কৃষি বিভাগ সহযোগিতায় প্রথম বারের মতো চাষ করছেন চিয়াসিড। তিনি বলেন প্রথম নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী রিনিয়ারা খাতুন কর্মকর্তা মাধ্যমে জানতে পারি চিয়াসিডের বিষয়ে। এরপরে তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহে জমি প্রস্তুত করে চিয়াসিড বীজ বপন করেন। বীজ রোপণ করার পর থেকে একবার মাত্র সেচ দেয়। শফিকুল ইসলাম বলেন চলমান মৌসুমের ফসল সরিষা বা গম চাষের চেয়ে পরিচর্যা কম করতে হয় এবং সেচ কম লাগে। খরচ কম হওয়ার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য এ ফসল উপযুক্ত হবে বলে ধারণা করছেন কৃষি অফিস। এখন তার জমিতে ফসল প্রায় সব পরিপক্ব রয়েছে। চিয়াসিডের বিজ ও স্যার সহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে আসছেন কৃষি বিভাগের কর্মরত কৃষিবিদরা। এ ফসল চাষে পনি কম লাগাই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ সংকট জমিতে এ ফসল চাষ আগামীতে আরও বাড়াবেন জানান শফিকুল ইসলাম। স্থানীয় একজন কৃষক মোঃ কামরুজ্জামান জানান আমার জমির পাশে শফিকুল ইসলাম চিয়াসিড চাষ করেছে প্রথমবারের মতো। বীজ বপন থেকে কর্তন পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে দেখেছি। এ ফসল চাষে পরিচর্যা কম লাগে সেচ কম লাগায় খরচ কম হয় তাই আগামীতে আমি চাষ করব।
নাচোল উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিনিয়ারা খাতুন বলেন আম বাগানের সঙ্গে পতিত চাষাবাদ নিশ্চিতের লক্ষ্যে অফিস থেকে আমাকে প্রদর্শনী দেওয়া হয়। এরপর আমি কৃষক মোঃ শফিকুল ইসলাম কে চিয়াসিড এর বিষয় বলি। নতুন ফসল চাষাবাদে আগ্রহী হলে অফিস থেকে বীজ, সার, বালাইনাশক দেওয়া হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করা হয়। তখন থেকে সর্বক্ষণ আমি চিয়াসিড ক্ষেতের বিষয় খোঁজখবর রাখি। যেহেতু নতুন ফসল চাষাবাদ হয়েছে। এখান থেকে আমার ও অনেক কিছু শিক্ষার অর্জনের বিষয় রযেছে। আশেপাশে থেকে কৃষকদের ডেকে নিয়ে এসে এই জমি দেখায়। চিয়াসিড সম্পর্কে তাদের অবগত করি। চাষাবাদ খুব ভালো হয়েছে। যেহেতু প্রথম হিসেবে এ ফসল আমাদের এলাকায় আশাঅনুরুপ হয়েছে। এখন কর্তন চলছে। মাড়াই করা হলে বলতে পারবো কত বিঘা জমিতে কত কেজি ফলন হলো। এ ফসলে রোগ বালাই তেমন নেই। সেচ ও কম লাগে। সরিষা, গরমের চেয়ে চাষাবাদ খরচ কম। জমি প্রস্তুত করার সময় মাটিতে কয়েক বার চাষ দিয়ে মাটিকে ঝুরঝুরে করার পর বীজ বপন করতে হবে। বপনের ৩০ থেকে ৪০ দিন পর একবার পানি দিতে হবে। কম খরচে উচ্চ মূল্যের ফসল হওয়া আগামী আরও চাষাবাদ বাড়বে জানা তিনি।
নানান ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ ‘চিয়া বীজ’ এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘সালভিয়া হিসপানিকা’। আমেরিকার, মেক্সিকোসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। চিয়াসিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোজেনিক, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, কেম্পফেরল, কোয়েরসেটিন ও ক্যাফিক অ্যাসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। যা মানবদেহে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ করে ও ক্ষতিকর কোলেস্টরলের (এলডিল) পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে উপকারী এইচডিএল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নাচোল কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হানুল ইসলাম বলেন চিয়াসিড মানবদেহে কর্মক্ষমতা ও রোগ- প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো, রক্তে সুগার স্বাভাবিক রাখা, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। চিয়াসিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় ও প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে। অ্যামিনো অ্যাসিড থাকায় চিয়াসীড ঘুম ভালো হতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে। উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম থাকায় শরীরের ব্যথা দূর করে। এছাড়া নিয়মিত খেলে ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর থাকে। পানিতে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। শরবতে ব্যবহার করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার রায়হানুল ইসলাম আরও বলেন, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নাচোলে প্রথম বারের মতো বিদেশি ফসল চিয়াসিড চাষ হচ্ছে। এটি খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল। এটিকে সুপার ফুড বলা হয়। অঝইর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামসহ কয়েক জন কৃষক এ ফসল চাষ করেছেন। আমরা তাকে সব বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি ও জমি পরিদর্শন করেছি। চাষাবাদ ভালো হওয়ার এবং খরচ কম হওয়ায় এ ফসল চাষে যেন অন্যান্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করা হচ্ছে। নাচোলের সেচ সংকট জমিতে এ ফসল চাষ করলে কৃষকরা ভালো লাভ করবে বলে জানান তিনি।
কোন মন্তব্য নেই