ঠাকুরগাঁওয়ে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
ছবি-প্রতিনিধি |
ঠাকুরগাঁওয়ে নিবির হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন নিবিরের মা-বাবা ও এলাকাবাসী।
২৮ জুন, শুক্রবার বেলা ১১টায় ঠাকুরগাঁও সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)’র সামনে মানববন্ধন করে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করেন তারা। মানববন্ধনে এলাকার শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে নিহত নিবির (১২) মা শিল্পী খাতুন, বাবা ওমান প্রবাসী আব্দুস সালাম বাবলু, পৌরসভার সংরক্ষিত ১-৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি নাজিরা আক্তার স্বপ্নাসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে নিহত নিবিরের মা বলেন, সাজ্জাত আমার ছেলেকে হত্যা করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাহিম ও সাজ্জাত আমার ছেলেকে কু-প্রস্তাব দিছিলো। এতে সে রাজী না হওয়ায় তাকে ঘরে আটকে রেখে হত্যা করেছে। পুলিশ সব জেনেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এসময় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবি করেন ।
নিবিরের বাবা বলেন, আমার ছেলেকে বলৎকার করা হয়েছে। এসিড নিক্ষেপ করে দুই চোখ ও হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সাজ্জাত ও মাহিম যে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তার সকল প্রমাণাদি পুলিশের কাছে আছে। পুলিশ মাহিমকে ধরলেও সাজ্জাতকে ধরছে না। কারণ সাজ্জাত শহরের সিয়াম ফ্যাশন এর মালিকের ছেলে। তারা প্রভাবশালী। এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়েছে পুলিশ সাজ্জাতকে জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করতে পারছে না। এই হত্যা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খুবই নীরব। মাহিমকে জেলে আটকে রেখে পুলিশ একটা সাজানো নাটক তৈরি করে বলছে মার্বেল খেলাকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড। আসলে নিবির কোন দিন মার্বেল খেলতো না।
তিনি আরও বলেন, আমি ওমান দেশে থাকায় পুলিশ প্রশাসন আমার পরিবারকে যে নির্যাতন করে তা বলা অসম্ভব। যেদিন ছেলের লাশ উদ্ধার হয় সে রাতে আমার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে থানায় আটকে রাখে পুলিশ এবং তারা আমার স্ত্রীকে পরকীয়ার বদনাম দিচ্ছে।
পুলিশের মুখে এমন কথা শুনে আমার স্ত্রী আত্নহত্যা করতে গেছিলো। আমি থানায় গেলে থানার তদন্ত অফিসার জিয়ারুল ইসলাম আমার সঙ্গেও খারাপ আচরণ ও অশ্নীল ভাষায় কথাবার্তা বলেন। পুলিশ আমার আত্নীয় স্বজনদের বলে বেড়াচ্ছে এটা পরকীয়ার মামলা। আদালতের লোকজনও বলছে পুলিশ বলছে আপনার স্ত্রী নাকি পরকীয়া করে। আর তদন্ত অফিসার জিয়ারুল ইসলাম আমায় বলছে আপনার স্ত্রী পরকীয়া করে কিনা সেটা খেয়াল করেন। এসময় তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
এর আগে গত ১৭ মে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিবির হত্যার সঙ্গে জড়িত কিশোর মাহিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান।
এসপি সেদিন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্বেল খেলাকে কেন্দ্র করেই স্কুলছাত্র নিবিরকে হত্যা করে একই এলাকার মো. মানিক এর ছেলে মাহিম। পুলিশের তদন্তে উঠে আসে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আর কেউ জড়িত নেই।
তবে পুলিশ সুপারের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নিহতের বাবা ওমান প্রবাসী আব্দুস সালাম বাবলু বলেছিলেন, ছেলে নিবির কখনোই মার্বেল খেলতো না। সে ফুটবল খেলতো। আর ছেলেকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে বাড়ির পাশে একাই ফেলে যাবে যা সন্দিহান। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত রয়েছে। সঠিক তদন্তের দাবিও করেন ।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক জানান, পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল সকালে শহরের মাদরাসা পাড়ায় বাড়ির পাশের গলি থেকে শিশু নিবিরের অর্ধগলিত মৃতদেহটি উদ্ধার করেন পুলিশ। নিবির সালান্দর কৃস্টপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ওই দিন জিঙ্গাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করেছিল পুলিশ।
কোন মন্তব্য নেই