ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনের কাজের ধীরগতি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
| ছবি-প্রতিনিধি |
ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করণের কাজের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় । শুধুমাত্র কয়েকটি স্থানে, পাইলিং, লোডটেস্ট আর কালভার্ট তৈরী করা হলেও জমি বুঝে না পাওয়ায় পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর (উইকেয়ার) ফেজ-১-এর আওতায় ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক ছয় লেন উন্নয়ন প্রকল্পটি (এন-৭) অনুমোদন দেওয়া হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২০২৬ সালের জুন মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে।
সড়ক ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার বিষয়খালী, চুটলিয়া মোড়, ধোপাঘাটা ব্রীজ এলাকায় ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে পাইলিংয়ের কাজ। এছাড়া তৈরী করা হচ্ছে ওভার ব্রীজের জন্য গার্ডার। চুটলিয়া মোড়ে এখন করা হচ্ছে লোড টেস্টের কাজ। কিন্তু সড়কের কোন অংশের জমি এখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এতে যেমন বিপাকে রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান একই সাথে সমস্যায় পড়েছেন জমির মালিকরা।
সড়ক ঘুরে এটাও দেখা যায়, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিষয়খালী এলাকা, তেতুলতলা, চুটলিয়া, দোকানঘর ও খয়েরতলা নামক এলাকার মহাসড়ক ছয় লেনের আগেই ছয় লেনের সড়কে পরিণত হয়েছে। তবে সব থেকে খারপ অবস্থা বিষয়খালীর বটতলা নামকস্থান থেকে রাকিবের চায়ের দোকান পর্যন্ত ১০০০ থেকে ১২০০ ফিট রাস্তা এখন তাই ছোট-বড় দুর্ঘটনায় পরিণত হয়েছে মৃত্যুর ফাঁদে। গত দুই মাস ধরে এই সড়কটি এতটাই বেহাল যে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এই সড়ক এখন দেখলে মনে হবে না এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক। ঝিনাইদহ-যশোর সড়কটি দেখতে এখন একদম মেঠো সড়কে পরিণত হয়েছে। মেঠো সড়কে যেমন গরুর গাড়ী চলতে চলতে গ্রামের ভাষা অনুযায়ী পয়ান হয়ে যায়। এখন ঠিক এ-ই মহা সড়কটি পয়ানে পরিনত হয়েছে। গত ৫ মে বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় পরের দিন ৬ মে দায়শাড়া ভাবে মেরামত করলেও মহাসড়কটি আবারও পূর্বের অবস্থাই ফিরে এসেছে। তাই ভোগান্তিতে পড়েছে এই মহাসড়কে চলাচলকারী হাজারো মানুষ ও গাড়ীর চালকেরা।
বিষয়খালী বাজারের আল-আমিন ষ্টোরের মালিক শওকত আলী বলেন, কয়েক বছর ধরে শুনে আসছি ৬ লেনের সড়ক হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা হবে। কিন্তু এখনও দোকান সরানোর কোন নোটিশ দেয়নি। তাই চিন্তাই আছি আমাদের ব্যবসায়ীদের আদেও ক্ষতিপুরণ দেবে কিনা। যদি দেয় তাহলে দ্রুত দিলে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্নত্য সরিয়ে নিতে পারবো।
বিষয়খালী এলাকার বসত বাড়ীর মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কয়েক বছর শুনে আসছি ৬ লেনের সড়ক হবে। ভাঙ্গা হবে আমাদের বসত বাড়ী। কিন্তু আমার মাথা গুজবার একমাত্র সম্বল এই বসত বাড়ী। তবে সরানোর কোন নোটিশ দেয়নি। তাই অপেক্ষাই আছি আমাদের ক্ষতিপুরণ কবে দিবে। দ্রুত ক্ষতিপুরণ দিলে আমাদের বসত বাড়ী অন্নত্য সরিয়ে নিতে পারবো। একন টাকা দিলে অন্য স্থানে বসত বাড়ী কিনবার জন জমি কিনতে পারতাম। আমরা গরিব মানুষ আমাদের কাছে তো আর অনেক টাকা থাকে না যে অন্ন স্থানে বাড়ী করবো। তাই টাকা পেলে আমরা অন্ন স্থানে দ্রুত বাড়ী করে সেখানে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু সেটাও পারছিনা টাকা না পাওয়ার কারণে।
চুটলিয়া এলাকার কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে শুনছি জমির টাকা দিয়ে দেবে। জমিও নিচ্ছে না আবার টাকা দিচ্ছে না। আমরা তো ঝামেলায় আছি।
একই এলাকার কৃষক নাদের মালিথা বলেন, আমাদের জমির জন্য ৭ ধারার নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু এরপর আর কোন নোটিশ পায়নি। এখন জমি তো ফেলেও রাখতে পারছি না আবার চাষ ও করতে পারছি না। ধান লাগালে তো আমাদের একটু হলেও উপকারে আসত। তাই খুব দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছি কি করবো।
এ ব্যাপারে উইকেয়ার ফেজ-১’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ নিলন আলী বলেন, আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। মান বজায় রেখে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি বুঝে পায় তাহলে কাজও পুরোদমে শুরু হবে আর আমরাও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ বুঝে দিতে পারব।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, অধিগ্রহণকৃত জমির জন্য সড়ক বিভাগ, বনবিভাগসহ কয়েকটি দপ্তরে ইতি মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের তালিকা দ্রুত দিলে আমরা টাকার জন্য চিঠি পাঠাবো। তারপর অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

কোন মন্তব্য নেই