ঝিনাইদহে রেজাউল করিম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধকোটি টাকা! ১০টি পরিবারকে নিঃস্ব করার অভিযোগ - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
ছবি-প্রতিনিধি |
ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা ও কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই রেজাউল করিম ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে শিক্ষক, ইউনিয়ন সচিব পদে চাকুরী দেওয়া ও জাল সার্টিফিকেট তৈরী করাসহ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে অর্ধকোটি টাকা। প্রায় ১০টি পরিবারকে নিঃস্ব করে পথে বসিয়েছে। উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানী করছে বলে ভুক্তোভুগিদের অভিযোগ। তবে অভিযুক্ত প্রতারক কয়েকটি নিয়োগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার দাবি করেন।
এদিকে থানা পুলিশ অভিযুক্ত প্রতারকের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের বাড়ি থেকে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ককটেল-ম্যাগজিন ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আশরাফুলকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার পর থেকে এ আসামী পলাতক রয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে তার অন্য দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুলও গা ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আশরাফ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর আগে তিনি কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ৬ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুল তার সাথে ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত ছিলো। এলাকায় তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিণী দিয়ে ইউনিয়নে চাদাবাজি, নির্যাতন, চাকুরী বাণিজ্য, প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়োগ, প্রতারণাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। তাদের অত্যাচারে গোটা ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। তারা এতোটাই প্রভাবশালী যে, তাদের সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতো। তাদের ভয়ে কেও কোন সময় প্রতিবাদ করতে পারেনি। এমনকি তারা উল্টো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ।
এ পরিবার ধোপাবিলা গ্রামে তার বাবা আমজাদ হোসেন মোড়ল অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্বে ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই রেজাউল করিম। তিনি এমপিও ভুক্ত করার কথা বলে এ অর্থ বাণিজ্য করে থাকেন।
এছাড়াও মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের আনিছুর রহমানের কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সচিব পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে গত ২০১৩ সালে ৯ লাখ টাকা গ্রহন করেন রেজাউল করিম। পরে চাকুরী দিতে না পারার কারনে তার জমি বিক্রয় করা টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিতে থাকে রেজাউল ও তার ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল। এক পর্যায়ে স্থানীয় শালিসের মাধ্যমে চার লাখ টাকা ফেরত দিলেও এখনও ৬ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে তা আত্মসাত করেন। দাবিকৃত টাকা ভুক্তোভুগি আনিছুর ফেরত চাইলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান বলে তিনি অভিযোগ করেন।
সর্বশেষ যশোর এলাকার হামিদপুর গ্রামের হতদরিদ্র দাউদ হোসেনের শিক্ষিতা কন্যা তাসলিমা সুলতানা তমার চাকুরীর জন্য বিভিন্ন স্থানে এ পরিবার ধর্না দেন। এক পর্যায়ে ঝিনাইদহে তাদের আত্বীয় স্বজনের পরিচয়ের মাধ্যমে এ দরিদ্র পরিবার গ্রামের মাঠের ধানী জমি বিক্রয় করে ১৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেন। তাদেরই আত্বীয় শৈলকুপার নাকোইল গ্রামের বসির জোয়ারদারের মাধ্যমে ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে প্রতারক রেজাউল করিম ২০২২ সালের ৪ই ডিসেম্বর ১৫ লাখ টাকা গ্রহন করেন। পরে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকার কারনে চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে চাকুরী দিতে ব্যার্থ হলে তিনি এ টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করেন।
পরিশেষে ভুক্তোভুগি তাসলিমা সুলতানা তমা ও তার স্বজনদের নিয়ে যশোর থেকে টাকা আদায় করতে থানা পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দেন। সকলেই আশ্বস্ত করলেও টাকা উদ্ধার করতে ব্যার্থ হন। পরিশেষে এ পরিবার রেজাউল করিমের কাছে দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে তিনি গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। শুধু হুমকি দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি টাকা ফেরত দিবে না বলে আদালতে এস-এ পরিবহন ও বিকাশের বিভিন্ন নাম্বারে ক্ষতিগ্রস্থ তমা ও তার স্বামী সিংগাপুর তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উল্টো ১৫ লাখ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন আদালতে। এ হয়রানী থেকে মুক্ত করতে এ নারীকে বিয়ের কু-প্রস্তাব দেন। বিয়ে করলে তার টাকা ফেরত ও মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে ক্ষতিগ্রস্থ এ নারী জানান। তিনি আরও জানান, আমি তার নামে আদালতে একটি মামলা ও থানাতে সাধারণ ডায়েরী করেছি।
আদালতে মামলা নং - ঝিনাইদহ সিআর ১৭৯/২৪. যা বিচারাধীন রয়েছে। আমরা নিরিহ মানুষ সে কারনে হত্যার হুমকিসহ চাকুরী দেওয়ার ১৫ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমিসহ পরিবারকে ভয়-ভীতির উপরে রেখেছেন এমনকি আমার সংসারও ভেঙ্গে দিয়েছেন। আমরা ন্যায় বিচারসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযোগ রয়েছে, এ ভাবে এ পরিবার বহু মানুষের সাথে রেজাউল করিম প্রতারণা করে পথে বসিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা টাকা ফেরত চাইলে হয়রানী করতে আদালতে মামলা ও অপরদিকে অস্ত্রের ভয় ভীতি দেখাতেন।
তবে অভিযুক্ত প্রতারক রেজাউল এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহের মহেশপুরে আনিছুরের কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের আরেক ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম ভুয়া নিবন্ধনে চাকুরী করতো ডেফোলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি আর স্কুলে যান না। তবে জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তাসহ সকলেই তদন্ত করছেন।
এ বিষয়ে সদর থানার উপ-পরিদর্শক নুর হোসেন জানান, রেজাউল করিম বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকেন এমন অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আদালতে যে মামলা রয়েছে তা তদন্ত চলছে। তবে সে অনেক মানুষকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পেয়েছি।
তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন উদ্দিন জানান, অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। রেজাউলের বিষয়ে তদন্ত চলছে। মানুষকে নিঃস্ব করলে তাকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
এ দিকে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, তার ভাই রেজাউল করিম ও জাহিদুল ইসলাম এরা কিভাবে মানুষের নিঃস্ব করেছে এলাকাতে খোঁজ নিলে জানতে পারবেন। তাদের ভয়ে কেও মুখ খুলতে সাহস পাইনা। তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এদের গ্রেপ্তার করা হলে অস্ত্রসহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে যাবে।
তবে র্যাবের কোম্পানী কমান্ডার মেজর নাইম আহমেদ জানান, আমরা প্রতারক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সে অনেকের চাকুরী দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকের পথে বসিয়েছেন। সব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, অপরাধী যেই হোক তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ সব বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।
কোন মন্তব্য নেই