ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের দুটি লিফট বন্ধ থাকায় সিমাহীন দূর্ভোগে রোগী ও স্বজনেরা - Chief TV - চিফ টিভি
বসির আহাম্মেদ, জেলা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের দুটি লিফট ১৪ দিন যাবৎ বন্ধ থাকায় সিমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তার স্বজনরা। আইসিইউ ইউনিট নির্মানের কাজ চলমান থাকায় লিফট বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘাঁ। ভোগান্তির কথা স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে দুর্ভোগ হলেও আমাদের কিছুই করার নেই। তবে দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি রোগী ও স্বজনদের।
ঝিনাইদহ জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৮ তলা সদর হাসপাতাল শহরের হামদহে অবস্থিত। যেখানে জেলার ৬ টি উপজেলা থেকে প্রতিদিন ৪’শ থেকে ৫’শ রোগী সেবা নিতে আসেন। আর হাসপাতলে ভর্তি থাকে প্রায় ৩শ’র অধিক রোগী। রোগী ও স্বজনদের চিকিৎসা সেবা গ্রহনে দিনে বেশ কয়েকবার ৮তলা ভবনটির বিভিন্ন তলায় উঠা নামা করতে হয়। কিন্তু ৯ তলায় আইসিইউ ইউনিট নির্মানের কাজ চলমান থাকায় বর্তমানে বন্ধ রয়েছে লিফট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রসূতি নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও শারিরিক ভাবে অক্ষম রোগীরা। লিফট বন্ধ থাকায় অসুস্থ রোগীরা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করেই লিফট বন্ধ করে চলছে নির্মানাধীন ভবনের কাজ। শত শত রোগীর এমন কষ্ট আর দুর্ভোগ দেখার যেন কেই নেই। তাই দ্রুত ভোগান্তি নিরসনের দাবি জানিয়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের পলাশ হোসেন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙ্গে গেছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাসপাতালের ৬ তলায় এসেছি ডাক্তার দেখাতে। আর ৬ তলায় উঠে এসে আমার হার্ট বির্ট বেড়ে গেছে। এখন আবার ৪ তলায় নেমে ড্রেসিং করাতে হবে। তাহলে দেখেন কত কষ্ট করে আমাদের চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। তাই আমি হাসপাতালের বন্ধ লিফট দ্রুত চালুর দাবী জানাচ্ছি।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মায়াধরপুর গ্রামের রাবেয়া বেগম জানান, আমার গায়ে, হাতে, মাজাই ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। এসে দেখি লিফট বন্ধ। তাই কষ্ট করে পাঁয়ে হেটে ৫ তলায় উঠেছি শুধু ডাক্তার দেখাবো তাই। তবে এতো কষ্ট করে ডাক্তার দেখাতে এসে আমরা আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পড়ছি। লিফট চালু থাকলে আমাদের এতো কষ্ট করে উপরে উঠা লাগতোনা।
প্রতাক্ষদর্শী শহরের পাগলাকানাই এলাকার মেহেদী হাসান জানান, লিফট বন্ধ থাকার কারনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সিড়িঁর উপরে আসমা বেগম ও রাজিয়া বেগম নামের দুই গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসব হয়েছে। এটা আমার কাছে দুঃখ জনক ঘটনা বলে মনে হয়েছে। তাই দ্রুত লিফটি চালু না করা হলে এমন সমস্যা অহরহ ঘটবেই।
স্ত্রীর চিকিৎসা সেবা নিতে শহরের মহিলা কলেজ পাড়া এলাকার আজাদ হোসেন বলেন, আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে সদর হাসপাতালে এসেছি। এখানে এসে দেখি লিফট বন্ধ আছে। এই রোগী নিয়ে কি ভাবে উপরে উঠবো এবং কি ভাবে ডাক্তার দেখাবো সেটাই আমি ভাবছি। আমি জরুরী ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বন্ধ দুটি লিফট চালুর দাবী করছি।
রোগীর স্বজন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রাম থেকে আসা রাকিবুল ইসলাম জানান, আমার বৃদ্ধ নানাকে নিয়ে কয়েক দিন আগে হাসপাতালে আসি। এসে দেখি দুটি লিফট বন্ধ করে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই আমার নানাকে কোলে করে উপরে নিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়। সেখান খেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরার চার দিন পর আমার নানার মৃত্যু হয়। আমার নানার জন্য সকলে দোয়া করবেন। যেন জান্নাতবাসি হতে পারে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ রেজাউল ইসলাম রোগীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালের লিফটের বিপরীতে সিঁড়ির বিকল্প কিছুই নেই। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। ৮ তলা ভবনের উপরে ৯ তলার কাজ চলমান রয়েছে। ফলে গত ১৩ দিন ধরে লিফট বন্ধ রয়েছে। আরো ১ মাস বন্ধ থাকবে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের ৯ তলায় আইসিইউ ইউনিট নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। তাই আমরা দুর্ঘটনা এড়াতে সাময়িক ভাবে লিফট বন্ধ রেখেছি। আশা করছি আগামী মার্চ মাসের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে বন্ধ লিফট চালু করতে পারবো। আর বন্ধ লিফট চালু হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
কোন মন্তব্য নেই