কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে, সপ্নে পাওয়া তেলপড়া দেওয়া চিকিৎসায় মিলছে কঠিন রোগ থেকে মুক্তি - Chief TV - চিফ টিভি
![]() |
ছবিঃ প্রতিনিধি |
স্বপ্নে পাওয়া চিকিৎসা থেকে মিলছে কঠিন থেকে মুক্তি - এমন প্রচারণা ও বিশ্বাসে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়ন ০২ নং ওয়ার্ডের রামদিয়া গ্রামে আগত নয়ন (৫০) কথিত এক কবিরাজের ঝাড়ফুঁক ও তেল পানি দেয়ার জমজমাট কারবার
রামদিয়া গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে আব্দুর রশিদের বাড়িতে ছুটছেন প্রতিদিন শ শ মানুষ। দিনের পর দিন সাধারন ও এক শ্রেণীর সহজ সরল প্রকৃতির মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ও অসহায়ত্বা তাকে পুঁজি করে চলছে ঐ কারবার।
অন্যদিকে ঐ বিষয়ে, আজও গড়ে ওঠেনি সামাজিক প্রতিরোধ। সেই সাথে কোন পদক্ষেপও নেই স্থানীয় প্রশাসনের।
আমাদের চিফ টিভির কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি, শেখ নাসির ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন, তিনি গত এক সপ্তাহ ধরে ওই রামদিয়া গ্রামের তেল পানি দেয়ার কারবার করছেন। আর ওই সময় সব রোগ ভালো করে দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন ওই কবিরাজ
এই রোগ ভালো করে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পরলে তার ফলে ওই এলাকার গ্রামীন রাস্তা দিয়ে তেলের বোতল নিয়ে ছুটছেন মানুষ। যেভাবে পারছে সেভাবে ভিড় করছে রামদিয়া আব্দুর রশিদের বাড়িতে। সূর্য ওঠার পর থেকেই শুরু হয় চিকিৎসা চলে রাতদিন ২৪ ঘন্টা।
১৯ মার্চ(মঙ্গলবার) সরজমিনে গেলে দেখা যায়, আব্দুর রশিদের বাড়িতে ওই কবিরাজ এর কাছে আসা দূর-দূরান্ত আসা নারী-পুরুষ সহ উৎসব মানুষের ভিড়।
রোগীরা বলেন, মানুষের মুখে শুনেছি, এখান থেকে তেল পড়া নিলে সকল রোগ থেকে মুক্তি হয়। এখানে নাকি দু একজন রোগী ভালো হয়েছেন। তাই আমরা এসেছি তেলপরা নিয়ে দেখি কতটা কার্যকর হয়।
রামদিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা, আব্দুল ভুট্টো বলেন, আমার সামনে দেখা দু একজন রোগী ভালো হয়েছেন এইবাড়ির রশিদ সহ, রশিদ আগে লাঠি নিয়ে হাটাহাটি করতে চলাফেরা করতে পারত না, এখন লাঠি বাদে তিনি চলাফেরা করছেন।
আমি তাহার কাছে কোন চিকিৎসা হতে যাইনি আমার কিছু হলে আমি হাসপাতালে যাই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কবিরাজ আমার কে দেখেনি কখনো আমাকে হঠাৎ দেখে আমার নাম ধরে ডেকে ছিলো। কিছু রোগী এখানে ভালো হচ্ছে, এবং হাদিয়া বাবদ ১০ টাকা ২০ টাকা নিচ্ছে আমি জানামতে।
পরে কথা হয় কথিত কবিরাজ, নয়ন(৫০) এর সাথে, উনি বলেন আমি ফরিদপুর আটরশি থেকে আসছি, আমার কাছে রোগীরা আসছেন এবং তাদের রোগ ভালো হচ্ছে, আমি তাদের কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয়নি ১০ টাকা ২০ টাকা হাদিয়া দিয়ে যা দেয় সেটাই নিচ্ছি, উনি কবে যাবেন এই এলাকা ছেড়ে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন আমার ঠিক নাই আমি পাগল মানুষ, আজ আছি কাল নাই।
কি কি রোগ ভালো করতে পারেন একথা জিজ্ঞাসা করলে কবিরাজ নয়ন বলেন, প্যারালাইসিস বাত ব্যথা, সহ নানান ধরনের রোগ ভালো করতে পারি।
পরবর্তীতে, ওই বাড়ির আব্দুর রশিদ বলেন, আমি অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানোর পরে ভালো হয়েছিলাম না, লাঠি ছাড়া চলাফেরা করতে পারতাম না, এখন আমি ইনশাল্লাহ ভালো এই কবিরাজের কাছ থেকে, আমি ভালো হয়েছি বিধায় তাকে আমার বাসায় আশ্রয় দিয়েছি।
উনি কেমন হাদিয়া নিচ্ছে জিজ্ঞাসা করলে, বলেন দশ টাকা ২০ টাকার বেশি নিচ্ছে না।
স্থানীয় আরো লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, আজ কয়েকদিন হল এখানে আসছে। আমরা শুনছি উনি আসছে রোগী দেখছে, কেউ বলছে ভালো কেউ বলছে ভালো না।
গোপন সূত্রে জানা যায়, ওই নয়ন কবিরাজ শুধু ১০ টাকা ২০ টাকায় নয়, ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে রশিদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে উনি জানান, কবিরাজের টাকা পয়সার বিষয় সংক্রান্ত বিষয়ে তার সাথে কোন সম্পর্ক নাই। আমি ভালো হয়েছি তাই, তাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি ওই এলাকার স্থানীয় মেম্বার, মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান, কেউ বলছে, রোগ ভালো হচ্ছে কেউ বলছে ভালো হচ্ছে না, এই কবিরাজ এর কাছ থেকে,আসলে সবই মনের বিশ্বাস , আমি প্রথমে শুনেছিলাম ১০ টাকা ২০ টাকা নিচ্ছে। এখন শুনছি ৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত মানুষের কাছ থেকে নিচ্ছেন।
আমার মনে হচ্ছে, এটা একটা পরিকল্পিত একটা ঘটনা, এই কবিরাজের পিছনে কিছু লোকের হাত থাকতে পারে। আমি প্রশাসনের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বিষয়টি তদন্ত করে, আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক।
কোন মন্তব্য নেই